হেমিংওয়ের উপন্যাস লেখার টিপস্


বড় একজন সৌখিন শিকারী কিংবা গভীর সমুদ্রের জেলে হওয়ার আগে হেমিংওয়ে ছিলেন সুনিপুণ শিল্পী। যিনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতেন এবং লিখতেন। তার সেরা গল্পগুলো আধুনিক যুগের মাস্টারপিস হিসেবে গণ্য হয়। আর তার ছোট ছোট বাক্য ও সহজ শব্দের গদ্যশৈলী বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারী।
হেমিংওয়ে উপন্যাস লেখার কৌশল নিয়ে কোন গবেষণামূলক গ্রন্থ লিখেননি। তিনি যা করেছেন তা হল, আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য চিঠি, প্রবন্ধ ও মতামতে ভরপুর বই। ওখান থেকে লেখনীর উপর তার উপদেশগুলো পাই। এর মধ্য থেকে সেরাগুলো একসাথে করে ১৯৮৪ সালে ল্যারি, ডব্লিউ, ফিলিপস একটি বই লিখেন। বইটির নাম ছিল “আর্নেস্ট হেমিংওয়ে অন রাইটিং”। আমরা ঐ বইটি থেকে সেরা সাতটি উক্তি বাছাই করে এখানে তুলেছি। সঙ্গে রয়েছে ওগুলোর ব্যাখ্যা।
১. একটা সত্য বাক্য দিয়ে লেখা শুরু করা
‘রাইটারস্ ব্লক’ এড়াতে হেমিংওয়ের একটা মজার তরিকা ছিল। “অ্যা মুভেবল ফিস্ট” এর একটি স্মরণীয় অনুচ্ছেদে লিখেন— “মাঝে মাঝে এমন হত— নতুন গল্প শুরু করে আর এগোতে পারতাম না। আগুনের সামনে বসে কমলা ছিলতাম আর কমলার খোসাতে চাপ দিতাম। মৃদু আওয়াজ হতো আর আগুনের আলোতে নীল হয়ে উঠত ছোট ফোটাগুলি। আমি দাঁড়াতাম আর প্যারিসের আকাশে তাকিয়ে ভাবতাম— ‘চিন্তা করো না, তুমি এর আগেও অনেক লিখেছ এবং এখনো লিখবে। তোমার যা করতে হবে তা হচ্ছে শুধু একটা সত্য বাক্য লিখা। তোমার জানা সবচেয়ে সত্য বাক্যটি লিখ।’ এভাবে আমি একটা সত্য বাক্য লিখতাম এবং ঐখান থেকে গল্প এগিয়ে চলত। এটা ছিল খুবই সহজ কারণ সব সময়ই আমার কাছে একটা সত্য বাক্য থাকত, অথবা দেখেছি অথবা কাউকে বলতে শুনেছি।”
২. একদিনের জন্য সবসময় ঐ জায়গাতেই থেমে যাও যখন তুমি জান পরবর্তীতে কি ঘটবে
থেমে যাওয়া ও ভেস্তে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। গল্প নিয়ে ভালভাবে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শব্দ লেখা কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার কাছে। কল্পনার ভাণ্ডার ফুরিয়ে ফেলার চেয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক শব্দ লেখা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ১৯৩৫ সালের অক্টোবর মাসে “এসকোয়ার” ম্যাগাজিনে “মনোলগ টু দা মায়েস্ট্রো: অ্যা হাই সীস্ লেটার” নামক একটি প্রবন্ধে হেমিংওয়ে তরুণ লেখকদেরকে এই উপদেশটি দেন—“সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে ভাল থাকতেই থেমে ফেলা। কারণ তুমি জানো পরবর্তীতে কি ঘটবে। উপন্যাস লেখার সময় তুমি যদি প্রত্যেকদিন এ পদ্ধতিটি অনুসরণ কর তাহলে কোনদিন আটকাবে না। তোমাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান এ কথাটিই বলতে পারি। সুতরাং মনে রাখতে চেষ্টা করবে।”
৩. যখন তুমি কাজ করছো না গল্প নিয়ে কখনো ভেবো না
আগের উপদেশটির সাথে সঙ্গতি রেখে হেমিংওয়ে বলেন— “পরবর্তী দিন কাজ শুরু করার আগ পর্যন্ত গল্পটি নিয়ে আর ভেবো না। তোমার অবচেতন মন ঐটা নিয়ে সবসময় কাজ করবে। কিন্তু তুমি যদি এটা নিয়ে সচেতনভাবে ভাব অথবা চিন্তা কর তাহলে ওটাকে তুমি মেরে ফেলবে। এবং তোমার মস্তিষ্কে পরবর্তী দিন শুরু করার আগেই ক্লান্ত হয়ে পড়বে।”
“অ্যা মুভঅ্যাবল ফিস্ট” এ আরেকটু বিস্তৃত করতে গিয়ে বলেন— “লেখার সাথে সাথে কিছু পড়াশোনা করা দরকার। তুমি যদি ওটা নিয়ে চিন্তা করতে থাক তাহলে পরবর্তী দিন তোমার লেখার জিনিসটা হারিয়ে ফেলবে। একটু ব্যায়াম করা দরকার। শরীরটাকে ক্লান্ত করা উচিত। সবচেয়ে ভাল প্রিয়তমার সাথে প্রেমে মজে থাকা। এটা যেকোন কিছুর চেয়েই উত্তম। তারপর তুমি যখন নিজেকে খালি করে ফেল তখন তোমার উচিত কিছু পড়ালেখা করা। যাতে পরবর্তী দিন কাজ শুরু করার আগে কোন বিষয়ে চিন্তিত বা উদ্ধিগ্ন না হও। আমি আমার লেখার ভাণ্ডার কখনো শূন্য না করার কলা রপ্ত করে ফেলেছি। কারণ আমি তখনই থেমে ফেলি যখনও ভাণ্ডারের গভীরে কিছু বাকি থাকে। এবং রাতে ভাণ্ডারে জমা হতে থাকে।”

No comments

Powered by Blogger.