বই পড়া ও রিভিয়্যু লিখা নিয়ে কয়েকটি টিপস

আপনারা যারাই এই লেখা পড়ছেন তাদের সবাই নিশ্চয়ই অনেক বই পড়েছেন, বই পড়তে অনেক সময় দিয়েছেন যে সময় আপনি টিভি দেখার পেছনে দিতে পারতেন, কোন মুভি দেখার পেছনে দিতে পারতেন বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারতেন। এই এতকিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করে আপনি বই পড়াতে সময় দিলেন। তাহলে বুঝতেই পারছি এটা আপনার প্রেফারেন্স।
বই পড়তে একটু সময় দিতে হয় বা অনেক ঘন্টা ব্যয় করতে হয়। এখন আমার এই সময় দেয়াটা যদি কাজের না হয় তাহলে সেটাকে অপব্যয় বললে তো ভুল হবেনা। আমি জাস্ট ইউটিলিটিরিয়ান পারস্পেকটিভে কথা বলছিনা। প্রত্যেক কাজেরই একটা লক্ষ্য থাকে, উদ্দেশ্যহীন কাজ কি আছে?
বই পড়া সেটা তো অনেক সফিস্টিকেটেড কাজ। এখন যেহেতু এর পেছনে সময় দিয়েছেন বা ভবিষ্যতেও আরও সময় দিবেন তাহলে আসেন আমাদেরক প্রশ্ন করি, ‘একটা বই সম্পূর্ণ শেষ করার পর এটার উপরে কি আমি পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারি?’ যে বইটা পড়তে পাঁচ ঘন্টা সময় দিলাম এটার উপর কি পাঁচ মিনিট লেকচার দিতে পারবো?
যদি পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারেন তাহলে আপনি উৎরে গেলেন, আর আধা ঘন্টা যদি লেকচার দিতে পারেন তাহলে তো আপনি অসাধারণ রিডার! এক্ষেত্রে জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাকের কথাটা মনে রাখার মতো: যদি একটা বই পড়ে সেটা রিপ্রডিওস না করতে পারো তাহলে সেটা তোমার পড়া হয়নি। বলছিলাম আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’র কথা।
বিশ্বের সেরা রিডারদের একজন জ্ঞানগুরু প্লাতো। সেই যে আদালতে সর্বশেষ জবানবন্দি দেন সক্রেতিস যেটা এক অসাধারণ বক্তৃতা, তার অসাধারণ রিপ্রোডাকশান করছেন প্লাতো। সেটা লিখতে গিয়ে প্লাতো অবশ্যই নিজে অনেক শব্দ হয়তো যোগ করেছেন বা পরম্পরায় হেরফের করেছেন। কিন্তু তিনি সক্রেতিসের বেশিরভাগ কথা নিশ্চয়ই লিপিবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। সক্রেতিস তা কোন বই লিখেন নি, এজন্য আমরা ধরতে পারি সক্রেতিসের জবানবন্ধি তার সর্বশেষ বই যেটা রিখেছেন তার এক শিষ্য।
রিপ্রোডাকশনের স্ট্যান্ডার্ড বলতে আমি সেটাকে বলতে পারি।
আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ ও তেমন একটি বই। সেখানে আহমদ ছফা কোন অডিও রেকর্ডের উপর আশ্রয় নেননি তার প্রমাণ সুস্পষ্ট। অতীতের স্মৃতি থেকে টেনে হিচরে অনেক কথা নিয়ে এসেছেন এবং নিজের গুরুর একটা ছবি একেছেন যে ছবি দিয়েই আমরা অনেকে আব্দুর রাজ্জাককে দেখি, বুঝি, পাঠ করি বা অনুধাবন করার চেষ্টা করি।
এখন আসেন আমাদের দিকে নজর দেই। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে পড়ছি পরীক্ষার জন্য তো অনেক পড়াশুনা করতে হয়, বই পড়তে হয়, নোট পড়তে হয় ইত্যাদি। তারা উপকার পেলেও পেতে পারেন।
একজন ভালো পাঠক হতে হলে কি কি করা যায়:
১. সব ধরণের বই পড়ে কিন্তু রুচি তৈরি করে রাখতে হবে
প্রথমত একজন সর্বভুক পাঠক সব ধরণের বই-ই পড়ে থাকেন। বিভিন্ন ধরণের বই পড়লে একসময় নিজেই ভালো বই বাছাই করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন। প্রথমে তাই সামনে যে ধরণের বই-ই আসে সেগুলো পড়ার চেষ্টা করতে পারেন। এতে পড়ার অভ্যাসটা হবে। একসময় একটা রুচি ডেভলপ করবে।
২. সব বই পুরোটা পড়ার সময় কই
জগতে এতো বই আছে তার সব কি পড়া সম্ভব বা অবাস্তব কল্পনা না? প্র্যাকটিক্যাল হওয়া ছাড়া আপনার সামনে আর কোন অপশন নাই কিন্তু। কিছু কিছু বইয়ের শুধু মলাট দেখবেন, কিছু কিছু বইয়ের শুধু নাম ও লেখকের নাম দেখবেন, কিছু বইয়ের ভূমিকা পড়েই খতম আর কিছু বইয়ের ফ্ল্যাপ।
এ সব কিছু দেখে তারপর যদি মনে হয় আমার আরও সামনে আগাতে হবে তবেই না আগাবো।
৩. সিদ্ধান্ত নিলাম পুরো বই পড়বো, তারপর?
ধরেন একটা বই পুরো পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম, তারপরও কি পুরোটা পড়তে হবে?
কিছু কিছু বইয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একই কথা লেখক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার বলছেন। আবার অনেক বইয়ে লেখক তার অনেকগুলো প্রবন্ধ একসাথে করে জুড়ে দেন। এর মধ্যে হয়তো এক দুটা আপনার কাজে লাগবে বা ভালো লাগে। এক্ষেত্রে আপনার দরকারি বা ভালো লাগার প্রবন্ধটি পড়ে ফেললেই হয়। অন্য সব না পড়লেও চলতে পারে।
৪. এই বইটা পুরোটাই পড়তে হবে, তাহলে
এমন কিছু বই আছে যে বইগুলো পুরোটা না পড়লে আপনার হবেনা, আপনি শান্তি পাবেন না, মাথায় পোকার মতো লেগে থাকবে শেষ না করার আকুতি।
সেগুলো কেমনে পড়বো?
৫. বইটা পড়ার আপনার উদ্দেশ্যটা কি আসলে?
বই আনন্দের জন্য পড়া হয়, জানার জন্য পড়া হয়, লেখার জন্য পড়া হয়, গবেষণার জন্য, বলার জন্য পড়া হয়, পরীক্ষার জন্য পড়া হয়, সময় কাটানোর জন্য, অন্যকে দেখিয়ে দেয়ার জন্য পড়া হয় আরও বিচিত্র কারণ আপনি এর সাথে যোগ করতে পারেন।
৬. বই পড়ি আনন্দের জন্য, সময় কাটানোর জন্য
এই দুই কাজের জন্য বই পড়লে আপনার সাথে আর কিছু দরকার নাই। শুধু বইটা হলেই হইলো। ধরবেন আর পড়বেন, ব্যস! এটা আপনি চেয়ারে হেলান দিয়ে, বিছানায় গা এলিয়ে, বারান্দায় বসে, ছাদে বসে বা গাছে বসেও পড়ে ফেলতে পারেন।
No comments